Brindaban Govt. College, Habiganj

বৃন্দাবন সরকারি কলেজ পরিচিতি

১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ কলেজ’ পরে ‘বৃন্দাবন কলেজ’ এবং ১৯৭৯ সালের ৭ মে জাতীয়করণের ফলে এর নামকরণ হয় ‘হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ।  প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ জেলার প্রাণ কেন্দ্রে ৬,১০ একর জমির উপর চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা মনােরম শ্যামল ছায়ায় অবস্থিত।  কলেজটি অমলিন উজ্জল ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনায় মহিমান্বিত।  ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব সাফল্য উদ্যোক্তাদের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করে।  এলাকার ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এটাই ছিল স্বপ্ন যা তাঁদের ঘুমাতে দেয়নি ।  কলেজের প্রয়ােজনীয় জমি ও অর্থের যােগান না থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তাগণ হবিগঞ্জে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দিলেন ।  এর নাম হল ‘হবিগঞ্জ কলেজ ।  স্থান হল মনােহরগঞ্জ বাজার ।  বর্তমান কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তর সীমানা থেকে মাত্র কয়েকশগজ দূরে মনােহরগঞ্জ বাজারের পশ্চিম প্রান্তে একটি সুন্দা বাঁশের চালাঘর, তাতে বাঁশের পার্টিশন দিয়ে ২/৩ টি কক্ষ নির্মাণ করা হল ।  একটি ছােট একতলা বিল্ডিং-এ অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বসার জায়গা করা হল ।  এক পাশে অফিস ।  ৩০/৩৫ জন ছাত্র নিয়ে হবিগঞ্জ কলেজ শুধুমাত্র মানবিক বিভাগ নিয়ে একটি ইনটারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে।  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কয়েকজন তরুণ শিক্ষককে নিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।  হবিগঞ্জ ৰারের এম.এ পাস কয়েকজন আইনজীবীও খন্ডকালিন অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন।  কলেজের লেখাপড়া খুবই ভাল চলছিল ।  কিন্তু সমস্যা হল নবপ্রতিষ্ঠিত কলেজের অধ্যক্ষের পদটি অলংকত করার জন্য যােগ্য লােক পাওয়া যাচ্ছিল না।  কলেজের নেতৃস্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব রায় সাহেব নদীয়া চন্দ্র দাস পুরকায়স্থের বিশেষ অনুরােধক্রমে কলকাতা রিপন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক এবং একই সংগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের খন্ডকালিন অধ্যাপক রায়চাঁদ-প্রেমচাঁদ বৃত্তিধারী ঈশান স্কলার বাবু বিপিন বিহারী দে রাজি হলেন।  বাবু বিপিন বিহারী দে নিজ জেলা বৃহত্তর সিলেটের শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখার লক্ষ্যে কলকাতার অধ্যাপনার জীবন ত্যাগ করে ১৯৩১ সালের জুন মাসে নব প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পদে যােগদান করেন।  অধ্যক্ষ বিপিন বিহারী দে মহােদয়ের মাসিক বেতন নির্ধারিত হয় মাত্র পঁচিশ টাকা এবং অধ্যাপকের মাসিক বেতন ষােল টাকা ।  কিন্তু এসময় একজন অধ্যক্ষের বেতন দেয়ার মত প্রয়ােজনীয় তহবিল কলেজের ছিল না।  অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের অধিভুক্তির পূর্বশর্ত ছিল দশ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্থায়ী সংরক্ষিত তহবিল প্রদর্শন এবং কোন প্রাদেশিক সরকারের স্বীকৃতি ।  উল্লিখিত পরিমান টাকার সংরক্ষিত তহবিল ঐ সময়ে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি ।  এ উভয়বিধ আর্থিক অসুবিধা দূর করার জন্য উদ্যোক্তাগণ শুরু থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালান ।  এলাকার ধনী ব্যক্তিদেরকে অনুরােধ করা সত্ত্বেও দশ হাজার টাকার সংরক্ষিত তহবিল সংগ্রহের সম্ভাবনা নাই দেখে কলেজ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, যে ব্যাক্তি কলেজকে দশ হাজার টাকা দান করবেন বা তার সমমূল্যের সম্পদ দান করবেন ।  তার ইচ্ছানুসারে হবিগঞ্জ কলেজের নামকরণ হবে ।  ফলশ্রুতিতে বর্তমান বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামের অধিবাসী বিত্তশালী মহাজন বাবু বৃন্দাবন চন্দ্র দাস কলেজে দশ হাজার টাকা দিতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন ।  অত:পর কলেজের পরিচালনা কমিটির পূর্ব-ঘোষিত সিদ্ধান্ত মােতাবেক হবিগঞ্জ কলেজের নামকরণ করা হয় বৃন্দাবন কলেজ ।  অধ্যক্ষ বিপিন বিহারী দে প্রয়ােজনীয় সংরক্ষিত তহবিল দেখিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট কলেজ অধিভুক্তির আবেদন করেন ।  হবিগঞ্জ তখন আসাম প্রদেশের অন্তর্গত সিলেট জেলার একটি মহকুমা ।  আসাম প্রদেশ সরকার নীতিগতভাবে কোন মহকুমায় কলেজ প্রতিষ্ঠায় স্বীকতি দিতেন না ।  বিশেষ করে সিলেট জেলায় মুরারিচাঁদ কলেজে আছে ।  উল্লেখ্য, তখন আসাম প্রদেশে মাত্র তিনটি কলেজ ছিল ।  শিলং, গৌহাটি ও সিলেট ।  জনাব বিপিন বিহারী দে আসাম প্রদেশে সরকারের স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ হয়ে বেঙ্গল সরকারের কাছে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন ।  শেষ পর্যন্ত বেঙ্গল সরকারের স্বীকতি পেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ আসাম প্রদেশের চতুর্থ কলেজ হল ।

১৯৩৩ সালে বৃন্দাবন কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্ররা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয় ।  সে বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃন্দাবন কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র দিতে রাজি হয়নি ।  সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিতে হয় ।  মােট ৩১ জন ছাত্রের সবাই পাস করে ।  প্রথম ব্যাচের ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৩৪ সাল থেকে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমােদন প্রদান করে ।  শুরু থেকেই একটা চমৎকার শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এবং আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কর্মকান্ড সন্তোষজনক হওয়ায় এ কলেজে ১৯৩৯-৪০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.এ. (পাস) কোর্স এবং ১৯৪০-৪১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে English, Political Economy and Political Philosophy – এই তিনটি বিষয়ে বি.এ. (অনার্স) কোর্স চালু করা হয়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় চলে আসে ।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত কলেজগুলােতে অনার্স কোর্স চালু রাখার অনুমতি দেয়নি ।  ১৯৪৯-৫০ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ইন্টারমিডিয়েট কমার্স কোর্স চালু হয় ।  ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.কম (পাস) কোর্স চালু হয় ।  ১৯৬০-৬১ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ইন্টারমিডিয়েট বিজ্ঞান শাখা এবং ১৯৬৯-৭০ শিক্ষবর্ষ থেকে বি. এসসি.(পাস) কোর্স খােলা হয় ।  এভাবে কলেজটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রী কলেজে পরিণত হয় ।

১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে কলেজে মােট ৭টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয় এবং ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ হতে মােট ৫টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন করা হয় ।  বর্তমানে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ।  উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানশাখাসহ স্নাতক (পাস) কোর্সে বি.এ , বিএসএস, বিবিএ এবং বিএসসি কোর্স চলমান আছে ।  একই সঙ্গে মোট ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্সসহ ১৪টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স কার্যক্রম চালু আছে ।